গুম, হত্যা, জুলুম, অবমাননা, ফোবিয়া, মৃত্যুদণ্ডসহ যত ধরনের নেতিবাচক, জুলুম রিলেটেড শব্দ আছে তার সবগুলো যে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে এদেশে চর্চা হয় তা হলো - ইসলাম। শ্বাসরুদ্ধকর, গুমোট লাশের গন্ধে ভারি হয়ে থাকা বাতাসে নাম ও দেহে ইসলামের গন্ধ থাকা প্রতিটা মানুষ দিন কাটায় দুঃখে, আতঙ্কে, হতাশায়। পান থেকে চুন খসলেই জঙ্গী, আল্লাহর নাম নিলেও উগ্র, চুল ভেজা শাড়ি পরা নারীর দিকে গোগ্রাসে না তাকিয়ে থাকলে দরজায় হানা দেবে হানাদার বাহিনী। মুসলিম যে কেউ এখানে না-মানুষ, হোমো সাসের, লোয়ার ক্লাস উনমানুষ।
সেই স্বাধীনতার পর থেকে নিয়ে চলছে আজ পর্যন্ত। রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে রক্ষী বাহিনীর হাতে দাড়ি কেটে দেওয়ার রেওয়াজ, উলামায়ে কিরামকে জেলবন্দী করা থেকে নিয়ে আজকের উগ্রবাদবিরোধী সেমিনার, ৫ই মে'র গণহত্যা কিংবা মোদীবিরোধী আন্দোলনে দিনে-দুপুরে চলতে থাকা বন্দুকের গুলি - হতাশ হওয়ার, রেগে ওঠার অনেক অনেক কারণ আছে। বারবার আশা জেগে উঠে নির্মমভাবে তা ধ্বংসেরও কারণ আছে। শাপলার গণজাগরণে জেগে উঠে শোকরানা মাহফিলে ঘুমিয়ে যেতে দেখে ঘেন্নায় থুথু ফেলারও কারণ আছে। বাঁচার কারণ আছে, মরার কারণ আছে।
ভ্রু প্লাক করা নেত্রী যখন ইশতেহারে ইসলামী শক্তির গণজাগরণের কথা বলে যান - আশা জাগে ধর্মপ্রাণ বুকে। আনকোরা নতুন এক হানাদার বাহিনী বানিয়ে তারাই কেড়ে নেয় বুড়ির দাড়িওয়ালা যক্ষের ধন। সংসদের দাড়িওয়ালারা বাহবা দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক বছর পরে এসে নির্ধারিত হয় চেতনা, তা দিয়েই ঠিক হয় রাজাকারের সংজ্ঞা। সাঁতার না জানা জনতা অন্য নৌকায় পা দেয়। কিন্তু তাতে রক্ষা হয় না, শেষমেশ হড়কেই যায়, পানিতে পড়ে, মরে যায়। ফিনিক্স বারবার জেগে ওঠে, বারবার ছাই হয়ে যায়। সে জানে না হতাশার কারণ, কেন সে হারে, কেন সে মরে। এদিক-ওদিক ঘোরে, কিন্তু '১৩ তে রাতের অন্ধকারে হয়ে '২০ এ কেন দিনেদুপুরে হলো, তার জবাব মেলে না।
লড়াইয়ের আগে নিদেনপক্ষে জানতে হয় শত্রু কে। প্রাণ বাঁচাতে হলে জানতে হয় কার সাথে আমার জানের শত্রুতা। কেন সে জেতে সেটা জানতে হয়। জানতে হয় কেন আমি হারি সেটাও। শত্রু যখন অস্ত্র ধরে দাঁড়িয়ে থাকে না, বরং বন্দুকের নলের দিক ঠিক করে দেয় - তখন তাকে চেনা কষ্ট। তারা যখন শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়া থেকে নিয়ে সবখানে ঢুকে যায় তখন তাদের জেতার রহস্য বের করা মুশকিল।
এ কষ্টের ও মুশকিলের কাজটিই করেছেন ভাই আসিফ আদনান তাঁর “What Is To Be Done: ইসলামবিদ্বেষ, উগ্র-সেক্যুলারিসম এবং বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের ভবিষ্যৎ” শিরোনামের সিরিজে। বেশ কয়েক পর্বে ভেঙে ভেঙে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন সমস্যা কী, সমস্যা কে, সমাধান কী, সমাধানকারী কে। কথা বলেছেন আশার দিক নিয়ে, বলেছেন হতাশার দিক নিয়েও। ডাক দিয়েছেন বিপ্লবের।
কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টে এঙ্গেলস ও মার্কস লিখেছেন সমাজের অবস্থান, আশা-হতাশার জায়গা এবং সর্বশেষ - বুর্জোয়াদের পতনের পরিকল্পনা। টেড কাজিনস্কি তাঁর The Unabomber Manifesto-তে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সমাজের দৈন্যদশা নিয়ে লিখেছেন। এর বিরুদ্ধে দিয়েছেন এক বিদ্রোহের ডাক। এসব সংকীর্ণ কিছু সমস্যার অনেক উর্ধ্বে গিয়ে আসিফ আদনান লিখেছেন মানুষের সার্বিক কল্যাণ, অর্থাৎ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা নিয়ে। মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অবস্থা এই জাহিলিয়্যাহর বর্তমান অবস্থা ও প্রতিকার নিয়ে লিখেছেন। প্রত্যেকের সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে লড়ে যাওয়া এ যুদ্ধকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন সবার কানে।
একমত হতেই হবে না। কিন্তু পড়ুন। অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে শিখবেন। লড়ার চিন্তা করবেন, লড়তে শিখবেন। সেক্যুলারিজমের আফিম থেকে মুক্ত হয়ে নিজের অবস্থা বুঝতে পারবেন। স্ক্রলিং, ইউটিউব সার্ফিং আর শুয়েবসে কাটানো দিনগুলো থেকে বের হয়ে জানতে পারবেন যে আপনিও একজন যোদ্ধা। এ যুদ্ধ আমার, এ যুদ্ধ আপনার, এ যুদ্ধ প্রতিটি মানুষের। প্রতিটি মানুষ।