প্রিয়তমা!
তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসতে চাই। রাতের অন্ধকারে, সন্ধ্যার নরম ও দুপুরের কড়কড়ে রোদে, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের প্রতিটি মুহূর্তে আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই। বেডরুম, ডাইনিং রুম, বরফশীতল সাইবেরিয়া, উষ্ণ মরুভূমি, নাতিশীতোষ্ণ বাংলার সবুজ পাহাড়ি অঞ্চল, আবহাওয়াহীন মহাকাশ, বরফশীতল সমুদ্র, তোমার খুব প্রিয় সুন্দরবন- সবখানে আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই। আকাশ-বাতাস, বন-সমুদ্র, পশুপাখি- দুপেয়ে অমানুষ মানুষ বাদে সবাই সাক্ষী হয়ে থাক আমাদের ভালোবাসার।
গুয়ান্তানামোর সেলে শুয়ে আমি প্রতিরাত তোমাকে স্বপ্নে দেখতে চাই, তুমি আসবে না? প্রতিদিন তারা যখন টেনে হিচড়ে আমাকে নেবে তাদের সৃজনশীলতার নতুন নতুন মাত্রা দেখানোর জন্য, একেক আঘাতে আমার আত্মা প্রাণপন চেষ্টা করবে দেহকে বিদায় জানাতে, আমার তীব্র আর্তনাদে কেঁপে উঠবে আল্লাহর আরশ, সেসময় হয়তো আমার থেকে হাজার মাইল দূরে বসে বুকে এক সমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে তুমি হাত তুলবে আল্লাহর কাছে, যেন তিনিই হয়ে যান তোমার ভালোবাসার রক্ষাকবচ। তুমি কাঁদবে, আওয়াজ করে দোয়া করবে। সে আর্তনাদ, সেই অশ্রুর ভালোবাসা পাবার জন্য আমি শত গুয়ান্তানামো মাথা পেতে নিতে রাজি।
কোনো একদিন গুয়ান্তানামোর ১৪ টি শিক গুনে গুনে ভেঙে বের হয়ে আসবো আমরা। পৃথিবীর মুক্ত আলো বাতাসের সংস্পর্শে শিউরে উঠবো, দাঁড়িয়ে যাবে আমার দেহের সবগুলো লোম। সেদিন আমি দেখবো তোমার দোয়ার স্বার্থকতা। দৌড়ে ঘরে এসে আমি অপেক্ষা করবো না তোমার দরজা খোলার। দরজা ভেঙে আচমকা আমি জড়িয়ে ধরবো তোমাকে। সেদিন আমাদের অশ্রুতে মিথ্যা হয়ে যাক প্রশান্ত মহাসাগর। সেদিন আমি তোমার চেহারা দেখবো, তোমার স্পর্শ পাবো, তোমার গরম শ্বাস অনুভব করবো, তোমার কপোলে চোখের ঠিক নিচে কালো দাগ দেখে আমি অবাক হবো।
হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়বো আমরা, ঘরবাড়ি, সম্পদ, তোমার শখের ফুলদানি, তিলে তিলে গড়ে তোলা আমাদের দুনিয়া- সবকিছু ফেলে। নির্যাতিত উম্মাহর চিন্তায় আমরা ভুলে যাবো পৃথিবী, শরীয়াহর ভালোবাসায় অস্বীকার করবো পৃথিবীর সবকটা সুখকে। আমরা পাহাড়ে যাবো, গুহায় যাবো, তাঁবুর নিচে কাটিয়ে দেবো রাতের পর রাত। সিরিয়ার হাত উড়ে যাওয়া শিশু, ফিলিস্তিনের বুক খালি হয়ে যাওয়া সে মা, ছড়ড়া গুলিতে অন্ধ হয়ে যাওয়া ধর্ষিত মেয়েকে নিয়ে দিনরাত আতঙ্কে কাটানো কাশ্মীরি বাবা- তাদের জন্যই ট্রিগারে শক্ত করে চেপে বসবে আমাদের আঙুল। যুদ্ধই মুক্তি, যুদ্ধই প্রেম, যুদ্ধই ভালোবাসা। আমার প্রেমের কবিতায় ঠায় নেবে রণাঙ্গনে তোমার ধৈর্য, সাহস ও উম্মাহর প্রতি বুকভরা ভালোবাসা।
কোনো এক প্রবল গোলাবর্ষণে, কোনো এক পাহাড়ের পেছনে বসে তোমার হাতে হাত রেখে আমরা কোনোদিন কাউকে না ছাড়ার ওয়াদা করবো। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ভুলে যাবো আমার হাতের একেএম, মাথার উপরে ম্যাকডগলাস, প্রবল আওয়াজে পড়তে থাকা সব বোমা। আমরা কোনো একজন শহীদ হয়ে গেলে, জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে ফল খাবো। প্রতিটি ফল খাওয়ার সময় অসম্ভব মিস করবো অপরকে। বুকভরা আশা, তৃষ্ণার্ত হৃদয় নিয়ে অপেক্ষা করবো, কবে সে আসবে। পুলসিরাতের পর আমি হন্যে হয়ে খুঁজবো তোমায়। অসাধারণ সুন্দর সমুদ্র, প্রচন্ড দামি প্রাসাদ, পৃথিবী থেকে জান্নাত আলোকিত করে দেওয়া হুর, সোনারূপার গাছগাছালি- সবকিছু ম্লান করে দিয়ে তুমি কি হাসবে আমার দিকে চেয়ে? বছরের পর বছর কি আমি তোমাকে দেখেই কাটিয়ে দেবো না?
বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের জন্য তুমি কি শুধু আমার হবে?
ভালোবাসার প্রতিটা লড়াইয়ে কি আমায় হারিয়ে দেবে?
অপেক্ষায় আছি, প্রিয়তমা। জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে।
Assalamullakum brother . I am mesmerised to read ur article. Real gem u r.